নিউজ ডেস্ক (চট্টগ্রাম)
আল্লাহ তাআলা পরম দয়ালু, পরম করুণাময়। কিন্তু তাঁর রহমতের পাশাপাশি রয়েছে ন্যায়বিচারের গাম্ভীর্যও। কিছু পাপ এমন রয়েছে, যেগুলো মানুষের আত্মাকে কলুষিত করে এবং সমাজে অন্যায়ের আগুন জ্বালায়। এগুলো আল্লাহর কাছে শুধু অপছন্দনীয়ই নয়, বরং ক্রোধ উদ্রেককারী। কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত আছে, যারা এসব গুরুতর গুনাহে লিপ্ত হয়, তাদের পরিণতি ভয়াবহ। তাই এসব পাপ চিহ্নিত করে সেগুলো থেকে দূরে থাকা প্রতিটি মুমিনের দায়িত্ব।
নিচে সেই ভয়াবহ ছয়টি পাপ তুলে ধরা হলো, যেগুলো আল্লাহর রোষানলে মানুষকে পতিত করতে পারে, আর যেগুলো থেকে বেঁচে থাকাই প্রকৃত ঈমানদারের পরিচয়।
১. কোনো মুমিনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো মুমিনকে হত্যা করলে তার শাস্তি জাহান্নাম। সেখানে সে স্থায়ী হবে এবং আল্লাহ তার প্রতি ক্রুদ্ধ হবেন। তাকে লানত করবেন এবং তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত রাখবেন।’ (সুরা নিসা: ৯৩)
২. চতুষ্পদ জন্তুর উপাসনা করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা গোবৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে, পার্থিব জীবনে তাদের ওপর তাদের রবের ক্রোধ ও লাঞ্ছনা আপতিত হবেই। আর এভাবে আমি মিথ্যা রচনাকারীদের প্রতিফল দিয়ে থাকি।’ (সুরা আরাফ: ১৫২)
উল্লেখ্য, শুধু চতুষ্পদ জন্তুর উপাসনা নয়, যেকোনো শিরকই আল্লাহ তাআলার কাছে খুবই অপছন্দনীয় এবং তা জাহান্নামে যাওয়ার কারণ। ইরশাদ হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে ব্যক্তি তাঁর সঙ্গে শরিক করে। এ ছাড়া অন্য পাপ তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে শিরক করল, সে অত্যন্ত গুরুতর অপবাদ আরোপ করল।’ (সুরা নিসা: ৪৮)
৩. মা-বাবাকে কষ্ট দেওয়া। মা-বাবা অসন্তুষ্ট হলে মহান আল্লাহও অসন্তুষ্ট হয়ে যান। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, মা-বাবার সন্তুষ্টির মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি আর মা-বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যে আল্লাহর অসন্তুষ্টি। (তিরমিজি: ১৮৯৯)
৪. বিদ্বেষমূলক কথাবার্তা বলা। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, নিশ্চয়ই বান্দা কখনো এমন কথা বলে যে কারণে আল্লাহ সন্তুষ্টি হন, অথচ সে কথা সম্পর্কে তার চেতনা নেই। এ কথার দ্বারা আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন। আবার বান্দা কখনো আল্লাহর অসন্তুষ্টির কথা বলে ফেলে—যার পরিণতি সম্পর্কে তার ধারণা নেই, অথচ সে কথার কারণে সে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (বুখারি: ৬৪৭৮)
৫. মুরতাদ হওয়া বা দ্বীন থেকে বের হয়ে যাওয়া। ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ ঈমান আনার পর আল্লাহকে অস্বীকার করলে এবং কুফরির জন্য হৃদয় উম্মুক্ত রাখলে তার ওপর আল্লাহর ক্রোধ আপতিত হবে এবং তার জন্য আছে মহাশাস্তি। তবে সে ব্যক্তির জন্য নয়, যাকে কুফরির জন্য বাধ্য করা হয়, কিন্তু তার অন্তর ঈমানে অবিচলিত।’ (সুরা নাহল: ১০৭)
৬. কুফরি করা ও নবীদের হত্যা করা। এটি আল্লাহর ক্রোধ নেমে আসার অন্যতম কারণ। বনি ইসরাঈল আল্লাহর ক্রোধপ্রাপ্ত অন্যতম জাতি। তাদের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘তারা লাঞ্ছনা ও দারিদ্রে পতিত হলো আর তারা আল্লাহর ক্রোধের পাত্র হলো। এটা এজন্য যে তারা আল্লাহর আয়াতকে অস্বীকার করত এবং নবীদের অন্যায়ভাবে হত্যা করত। অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন করার কারণেই তাদের এই পরিণতি হয়েছিল।’ (সুরা বাকারা: ৬১)
এই ছয়টি পাপ শুধু দুনিয়ায় নয়, আখেরাতেও ধ্বংস ডেকে আনে। যে ব্যক্তি মুমিন হত্যার মতো জঘন্য কাজ করে, মা-বাবাকে কষ্ট দেয়, বিদ্বেষ ছড়ায় বা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়, সে আল্লাহর ক্রোধ ও লানতের উপযুক্ত হয়ে পড়ে।
তবে আশার দরজা কখনো বন্ধ নয়। আল্লাহর কাছে ফিরে এলে তিনি ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা, যারা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ মাফ করে দেন।’ (সুরা জুমার: ৫৩)
তাই আসুন, আমরা আন্তরিক তওবা করি, কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবন গড়ি, আর এমন সব কাজ থেকে দূরে থাকি যেগুলোর কারণে আল্লাহ তাআলা রাগান্বিত হন। কারণ, আল্লাহর সন্তুষ্টিই প্রকৃত সফলতা; এই দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতেই।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাঁর ক্রোধ থেকে রক্ষা করুন এবং এমন জীবন দান করুন যা তাঁর সন্তুষ্টির যোগ্য। আমিন।

দৈনিক চট্টগ্রামপোস্ট